দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁচা পাটের মোকাম খুলনার দৌলতপুর থেকে ভারত ও পাকিস্তানে রপ্তানী বেড়েছে। এর আগে চীনে সবচেয়ে বেশি পাঁট রপ্তানী হতো। উল্লিখিত দুটি দেশের পাটকলগুলোতে চাহিদা বাড়ায় তারা এ অঞ্চলে পাট কিনছে। স্থানীয় মোকামে মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও কুষ্টিয়া থেকে কাঁচা পাট আসে। বিদেশে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামী বছর থেকে এ অঞ্চলে বিজেআরআই-৯ নামক উন্নত জাতের পাটের আবাদ হবে।
পাট ব্যবসায়ীদের সূত্র জানায়, ১ জুলাই থেকে পাটের মৌসুম শুরু হয়। স্থানীয় দৌলতপুর মোকামে দক্ষিণের এসব জেলা থেকে মেছতা, সাদা ও তোষা জাতের পাট আসে। মৌসুম শেষ হওয়ায় কৃষকের ঘরে কাঁচা পাটের মজুদ কমে এসেছে। সরকার বাজারে পলিথিন নিষিদ্ধ করায় পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বেড়েছে। স্থানীয় বেসরকারি পাটকলগুলোতেও চাহিদা বেড়েছে।
বৃহত্তর খুলনার পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, সাতক্ষীরার তালা, কলারোয়া, জেলা সদর, বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলায় পাটের উৎপাদন হয়। মূলত এ অঞ্চলে তোষা জাতের ফলনটাই ভালো।
পাট অধিদপ্তর খুলনার সূত্র জানায়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর, সাতক্ষীরা জেলার ঝাউডাঙ্গা, পাটকেলঘাটা, খোদ্দে, বাগেরহাটের মোল্লাহাট ও চিতলমারী হাটে প্রতি মণ তোষা জাতের পাট ৩১০০ টাকা থেকে ৩৩০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। গত বছর এ জাতের পাটের মূল্য ছিল ২৩০০ থেকে ২৪০০ টাকা মণ। বিদেশে কাঁচা পাটের চাহিদার প্রেক্ষিতে দাম উঠা-নামা করে। ডলারের মূল্যের উপরও কখনও দাম বাড়ে আবার কমে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মেছতা জাতের পাট প্রকারভেদে ২৪০০-২৬০০ টাকা, সাদা ২২০০-২৬০০ টাকা এবং তোষা জাতের পাট ৩২০০-৩৫০০ টাকা মণে বিক্রি হয়।
খুলনার পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা বাসু দেব হালদার জানান, পাকিস্তান ও ভারতের জুট মিলগুলোতে কাঁচা পাটের চাহিদা বেড়েছে। গত মৌসুমে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ভারতের চাষীরা পাটের আবাদ কমিয়ে দেয়। সেখানকার ঘাটতি পূরণের জন্য খুলনা অঞ্চল থেকে কাঁচা পাটের চাহিদা বেড়েছে। এর আগে কাঁচা পাটের সবচেয়ে বড় বাজার ছিল চীন।
ডুমুরিয়ার পাট উন্নয়নের উপ-সহকারি কর্মকর্তা নিলয় মল্লিক জানান, চিংড়ির পরিবর্তে কৃষকরা এখানে পাট চাষে ঝুঁকে পড়েছে। উৎপাদনে উৎসাহিত করার জন্য এ উপজেলার ১ হাজার চাষীকে বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা হচ্ছে। জনপ্রতি ১২ কেজি করে সার ও এককেজি বীজ সরবরাহ করা হয়।
আগামী মৌসুম থেকে দক্ষিণ জনপদের এ জেলাগুলোতে বিজেআরআই-৯ নামের উন্নত জাতের পাটের আবাদ করা হবে। এ অঞ্চলের আবাদকৃত তোষা জাতের পাট হেক্টরপ্রতি ৬৫ মণ উৎপাদন হচ্ছে। আগামীতে উন্নত জাতের পাটের আবাদ হলে হেক্টরপ্রতি ৮০ মণ পাট উৎপাদন হবে।
উল্লেখ্য, গত অর্থ বছরে খুলনার মোকাম থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৪ বেল কাঁচা পাট বিদেশে রপ্তানী হয়।
খুলনা গেজেট/ টিএ